থ্রিলার গল্প,"গহীনের গহ্বর"


আরো পড়ুন :


 থ্রিলার অধ্যায় ১: নিখোঁজের খবর:

 রাত তখন সাড়ে এগারোটা।  শীতের রাতে কুয়াশা এমনভাবে জমেছে, যেন গ্রামের চারপাশে একটা ঘন পর্দা টানানো হয়েছে।  খুলনার অদূরের এক গ্রাম ‘পাথরঘাটা’।  গ্রামের মানুষজন দিনের আলো ফুরানোর সঙ্গে সঙ্গেই ঘরে ঢুকে যায়, কিন্তু আজ সেই নীরবতা ভেঙে দিয়েছে একটা অদ্ভুত ঘটনা।

 স্থানীয় স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম সাহেবের ছেলে মুনিম হঠাৎ করে নিখোঁজ হয়ে গেছে।

 “একটু বাজারে যাচ্ছি”—এই বলে বিকেল পাঁচটার দিকে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল মুনিম।  তারপর থেকে আর কোনো খোঁজ নেই।

 মুনিমের মা, হালিমা বেগম, ছেলেকে না পেয়ে পাগলের মতো হয়ে গেছেন।  গ্রামের চেয়ারম্যান, মামুন সাহেব, খোঁজ নিতে এলেন।  সঙ্গে এলেন কয়েকজন স্থানীয় যুবক।

 “কাশেম ভাই, আপনার ছেলেকে কি কেউ হুমকি দিতো?” —চেয়ারম্যান জিজ্ঞেস করলেন।

 কাশেম সাহেব অসহায়ভাবে মাথা নাড়লেন, “না ভাই, মুনিম তো খুব শান্ত ছেলে।  কাদের সাথে শত্রুতা হবে ওর?”

 কিন্তু গ্রামের কয়েকজন বলাবলি করছিল—গত সপ্তাহে বাজারে একদল অচেনা লোক এসেছিল।  তাদের সঙ্গে মুনিমের কিছু তর্ক-বিতর্ক হয়েছিল।  লোকগুলো শহরের লোক, চোখেমুখে একধরনের ভয় ছিল।


 থ্রিলার অধ্যায় ২: শহরের ছায়া:


 নিখোঁজ হওয়ার দুদিন পর, মুনিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের লোকেশন পাওয়া গেল—ঢাকার মোহাম্মদপুরে।

 কাশেম সাহেব আর চেয়ারম্যান মামুন সাহেব শহরে রওনা দিলেন।  সাথে গেলেন স্থানীয় সাংবাদিক রাকিব, যিনি কিছুদিন হলো ঢাকায় কাজ শুরু করেছেন।

 ঢাকায় পৌঁছানোর পর তারা যোগাযোগ করলেন ডিবি অফিসার সায়েম রহমানের সঙ্গে।  সায়েম একসময় এই পাথরঘাটা এলাকায় বড় হয়েছিলেন।  গ্রামের খবর পেয়ে তিনি নিজেই তদন্তে এগিয়ে এলেন।

 “একটা ছেলেকে ঢাকা পর্যন্ত কিডন্যাপ করে আনা—এর পেছনে বড় কিছু আছে,” —সায়েম বললেন।

 তদন্ত করতে করতে সায়েম জানতে পারলেন, মুনিম আসলে স্থানীয় এক মাদক চক্রের বিরুদ্ধে তথ্য জোগাড় করছিল।  শহরের কিছু বড় রাজনৈতিক ব্যক্তির সঙ্গে এই চক্রের সংযোগ রয়েছে।


 থ্রিলার অধ্যায় ৩: অজানা ডায়েরি:

 কাশেম সাহেবের পুরনো বইয়ের তাক থেকে একটি ডায়েরি পাওয়া গেল, যা মুনিম গোপনে লিখে রেখেছিল।  সেখানে লেখা ছিল:

 “তিনজন লোক গত সপ্তাহে গ্রামের বাজারে এসেছিল।  তারা নীল ব্যাগে কিছু দিচ্ছিল দোকানদারদের।  আমি দেখতে পেয়েছিলাম… একজনের নাম ছিল সালমান ভাই।  ঢাকার লোক।  আমি এসবের ছবি তুলেছি।”

 ছবিগুলো পাওয়া গেল মুনিমের গুগল ড্রাইভে।  ডিবি অফিসার সায়েম যখন ছবিগুলো দেখলেন, তখন তিনি চমকে উঠলেন—ছবিতে থাকা এক ব্যক্তি ঢাকার এক শীর্ষ নেতার ঘনিষ্ঠ লোক।

 এখন এই বিষয়টি গোপনে রাখতে হবে।  সায়েম বুঝে গেলেন, তারা যাকে খুঁজছে সে শুধু কিডন্যাপার নয়—সে একটি বিশাল অপরাধ জগতের অংশ।


 থ্রিলার অধ্যায় ৪: গোপন তদন্ত:


 সায়েম রহমান সিদ্ধান্ত নিলেন, ডায়েরি আর ছবিগুলোর ব্যাপারে কাউকে কিছু জানাবেন না, এমনকি কাশেম সাহেবকেও না।  তিনি ভদ্রভাবে বললেন,

 “মামা, কিছু সূত্র পাওয়া গেছে।  তবে এটার পেছনে বড় কিছু থাকতে পারে, তাই সাবধানে থাকতে হবে।”

 এরপর তিনি যোগাযোগ করলেন নিজের একজন পুরনো সোর্স, জসিমের সঙ্গে।  জসিম একসময় এই চক্রের নিচু স্তরে কাজ করতো, এখন তথ্যদাতা।

 জসিম বলল, “ভাই, সালমান নামে যে লোকটারে বললেন, সে তো মোহাম্মদপুরের 'আলিফ সেন্টারের' পেছনের বাড়িতে থাকে।  তবে আপনি সরাসরি গেলে বিপদ হবে।”

 সায়েম নিজের পোশাক বদলে সিভিলে ওই এলাকায় গেলেন।  দেখে এলেন, বাড়িটা ছিল প্রায় একটা দুর্গের মতো, সিসিটিভি, গেটের পাহারাদার, আর মাঝে মাঝেই দামি গাড়ি ঢুকছে বের হচ্ছে।

 একটা ছোট চায়ের দোকানে বসে তিনি শুনলেন,

 “এই বাড়িতে রাতের বেলা অচেনা লোক আসে।  কেউ কেউ বলে, ভিতরে বন্দুকও আছে।”

 এই মুহূর্তে সায়েম বুঝে গেলেন, মুনিম ভুল জায়গায় হাত দিয়েছিল।


থ্রিলার অধ্যায় ৫: অচেনা ফোনকল:


 পাথরঘাটায় তখন সন্ধ্যা।  কাশেম সাহেব তখন উঠানে বসে ছিলেন।  হঠাৎ তার ফোন বেজে উঠল—অচেনা নাম্বার।

 – “আপনার ছেলে ভালো আছে।  খোঁজার দরকার নেই।”

 – “কে আপনি?”

 – “যেটুকু বলার বলেছি।  যদি পুলিশে যান, তাহলে ছেলের ক্ষতি হবে।”

 এই কথা বলেই কল কেটে গেল।  কাশেম সাহেব কাঁপতে কাঁপতে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালেন।  তিনি সঙ্গে সঙ্গে ফোন করলেন সায়েমকে।

 সায়েম সেই নম্বর ট্র্যাক করলেন।  লোকেশন দেখাচ্ছে নারায়ণগঞ্জের একটি পরিত্যক্ত গুদামঘর।

 তিনি তখনই রাকিবকে ফোন করে বললেন,

 “তোমার ক্যামেরাটা নিয়ে কাল ভোরে নারায়ণগঞ্জ আসো।  আমরা ওদের একটুর জন্যও ছাড়ব না।”


 থ্রিলার অধ্যায় ৬: নারায়ণগঞ্জের গুদামঘর:

আরো পড়ুন : 


 সকাল ঠিক ৬টা।  সায়েম, রাকিব, এবং ডিবির দুজন সদস্য মিলে ছোট একটি মাইক্রোবাসে রওনা দিলেন নারায়ণগঞ্জের দিকে।  রাকিব ক্যামেরা গলায় ঝুলিয়ে সায়েমকে বলল,

 “দাদা, ভিডিও করতে পারি?  যদি প্রমাণ লাগে?”

 সায়েম হেসে বললেন, “শুরু করো, তবে সাবধানে।”

 লোকেশন অনুযায়ী, একটি পরিত্যক্ত পাট গুদাম—জায়গাটা শহর থেকে একটু বাইরে, চারপাশে ঝোপঝাড়, ভাঙা দেয়াল।  দূর থেকে দেখা গেল গুদামের পাশের ঘরে একজন পাহারাদার বসে আছে, হাতে ওয়াকিটকি।

 সায়েম গুদাম পর্যবেক্ষণ করে বললেন,

 “দুইদিক দিয়ে ঢুকব।  আমি আর জাহিদ সামনে যাব, রাকিব তুমি রাকিবুলের সাথে পেছনের জানালা ঘিরে রাখো।”

 সবার চোখে চোখ রেখে একটিই সংকেত—“চলো।”

 কিছুটা চুপিচুপি এগিয়ে গিয়েই দেখা গেল, গুদামের পেছনের ঘরে এক কিশোরকে বেঁধে রাখা হয়েছে।  নিঃসন্দেহে সে মুনিম।  তার মুখে স্কচটেপ, হাতে দড়ি।

 সায়েম এক লাফে ঢুকে পড়লেন ঘরে।

 “পুলিশ!  কারো নড়াচড়া মানে গুলি!”

 তিনজন লোক হতভম্ব হয়ে গেল।  দুজন পালানোর চেষ্টা করতেই জাহিদ ও রাকিবুল তাদের ধরল।  একজন ব্যাগ থেকে কিছু বের করতে যাচ্ছিল—পরে দেখা গেল সেটি একটি পিস্তল।  সায়েম সাথে সাথে তার দিকে বন্দুক তাক করলেন।

 সবাইকে গ্রেপ্তার করে, মুনিমকে উদ্ধার করে তারা ফিরে আসল ঢাকায়।


 থ্রিলার অধ্যায় ৭: চক্রান্তের ছায়া:


 মুনিম এখনও ঘাবড়ে আছেন।  হাসপাতালে বসে তিনি বললেন,

 “ওরা আমাকে কিছু বলছিল না।  শুধু বলেছিল, ‘তুই অনেক বেশি দেখেছিস।’”

 সায়েম বুঝতে পারলেন, এটা কেবল কিডন্যাপ নয়—এই চক্র চাচ্ছিল তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণদাতা সরিয়ে ফেলতে।

 এরপর তদন্তে যা বেরিয়ে এল, তা ভয়ানক।

 সালমান আসলে একজন নামকরা ব্যবসায়ীর ভাই, যে অবৈধ অস্ত্র ও মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত।  তার যোগাযোগ রয়েছে রাজনৈতিক উচ্চ পর্যায়েও।

 তাদের সব তথ্য জড়ো করে সায়েম যখন প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন মূল অভিযানের জন্য, তখন এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা তাকে ফোন করে বললেন,

 “সায়েম, এই কেস থেকে সরে যাও।  উপর থেকে নির্দেশ আছে।”

 সায়েম স্তব্ধ হয়ে গেলেন।

 “আমি কি তাহলে অন্যায়কারীদের পাশে দাঁড়াবো, স্যার?”

 উত্তর এল না, শুধু একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস।


 থ্রিলার অধ্যায় ৮: সিস্টেমের বিরুদ্ধে:


 ডিবি অফিসার সায়েম রহমান জানতেন, এই কেস থেকে হাত গুটিয়ে নিলে শুধু মুনিম নয়, আরও অনেক নিরীহ মানুষ এভাবে হারিয়ে যাবে।

 তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন—নিজ উদ্যোগে অভিযান চালাবেন, অফিসিয়ালি না হলেও বেসরকারিভাবে।

 তিনি নিজের কয়েকজন বিশ্বাসযোগ্য সহকর্মীকে নিয়ে তৈরি করলেন একটি টিম।  রাকিব দিচ্ছিল ভিডিও ডকুমেন্টেশন, যাতে প্রমাণ থাকে সবকিছুর।

 রাত ১১টা, মোহাম্মদপুরের আলিফ সেন্টারের পেছনের বাড়িতে তারা হানা দিল।  কিন্তু তারা যেটা ভাবেনি, সেটাই হল—বাড়িটা ছিল একেবারে ফাঁকা।

 সামান্য কাগজপত্র আর কিছু পোড়া নথি ছাড়া কিছুই পাওয়া গেল না।

 রাকিব হতাশ গলায় বলল, “ওরা আগেই বুঝে গেছে।”

 সায়েম জানতেন—উপর মহল থেকে গোপন তথ্য গেছে।  তার টিমের কারও মাধ্যমে নয়, বরং উচ্চপদস্থ প্রশাসনের কেউই এটা ঘটিয়েছেন।

 তিনি বললেন, “আমাদের এখন নতুন পথ নিতে হবে।  রাস্তায় নামতে হবে।”


 থ্রিলার অধ্যায় ৯: মিডিয়ার আগুন:


 রাকিবের হাতে থাকা ভিডিওগুলো ছিল সত্যের ধারালো অস্ত্র।  সেই ভিডিওতে ছিল—

 গুদামঘর থেকে উদ্ধার অভিযান

 সালমান ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের মুখ

 এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, মোহাম্মদপুরের বাড়িতে পাওয়া কিছু গোপন নথি, যেখানে উল্লেখ ছিল কাদের পৃষ্ঠপোষকতায় এই চক্র চলছে।

 রাকিব সেই ভিডিওটা সম্পাদনা করে দিল সায়েমকে।

 “আপনি কি সত্যিই মিডিয়াতে দেবেন?”

 সায়েম বললেন, “আমাদের বিচারব্যবস্থা যেখানে ধোঁয়াশা, সেখানে সত্যের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হলো জনগণ।”

 পরদিন সকালে দেশের শীর্ষ অনলাইন নিউজ পোর্টালে ভিডিও প্রকাশ পেল:

 “অস্ত্র ও মাদক চক্রের পেছনে কারা?  এক সাহসী ডিবি অফিসারের অপ্রকাশিত অভিযান”

 ভয়ঙ্কর রকম ভাইরাল হয়ে গেল ভিডিও।  চারদিকে শুরু হল আলোচনার ঝড়।

 ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব—সবখানে ঘুরছে সত্যের কাহিনি।

 আর ঠিক এই সময়, সেই চক্রের পেছনের লোকগুলো বুঝে গেল, পরিস্থিতি হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে।

 একটি অচেনা নম্বর থেকে সায়েমের ফোনে এল হুমকি:

 “তুই যদি বাঁচতে চাস, চুপ হয়ে যা।  নয়তো তোর পরিবারও নিরাপদ নয়।”

আরো পড়ুন : 



 থ্রিলার অধ্যায় ১০: অন্ধকারে আঘাত:


 ভিডিও ভাইরাল হওয়ার একদিন পর, রাত তিনটা।  ঢাকার উত্তরা এলাকায় সায়েম রহমানের ফ্ল্যাটে হঠাৎ আগুন লাগে।

 তদন্তে দেখা গেল, কারও ইচ্ছাকৃতভাবে আগুন লাগানো—ব্যালকনির পাশে রাখা গ্যাস সিলিন্ডারে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল।

 ভাগ্যক্রমে, সায়েম ও তার স্ত্রী বাসায় ছিলেন না—তারা আগেই লুকিয়ে গিয়েছিলেন।

 সায়েমের চোখে তখন আগুন, মুখে অদ্ভুত এক দৃঢ়তা।

 “ওরা আমার পরিবারকে টার্গেট করেছে।  এবার আমি ওদের পরিবারের গায়ে হাত রাখব—সত্য আর প্রমাণ দিয়ে।”

 রাকিব ততক্ষণে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল।  সে যোগাযোগ করল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও কিছু প্রবাসী বাংলা মিডিয়ার সঙ্গে।

 রাকিবের ভাষায়,

 “যেখানে দেশি সিস্টেম কাজ করে না, সেখানে আন্তর্জাতিক চোখ বড় ভয়ংকর হয়।”

 এই মুহূর্তে সারা দেশের মানুষ জানছে—একটা চক্র, পুলিশের ভেতরের কয়েকজন ও রাজনীতিবিদদের সাহায্যে কতটা ভয়ানক হয়ে উঠেছে।


 থ্রিলার অধ্যায় ১১: ফাঁসির দড়ি কাছাকাছি:


 সালমান পালিয়ে বেড়াচ্ছে।  র‍্যাব ও ইন্টারপোলের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি হয়েছে।  কিন্তু সে দেশের বাইরে যাওয়ার আগেই ধরা পড়ে, বেনাপোল বর্ডারে।

 সে নিজেই বলে ফেলল,

 “আমি শুধু মধ্যস্থতাকারী ছিলাম।  আসল হুকুম দিত এক বড় রাজনীতিবিদ, নাম বললে আমার পরিবার থাকবে না।”

 সেই নামটা যখন সায়েম শুনলেন, তার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেল।

 এটা সেই ব্যক্তি, যার সাথে একসময় তিনি প্রশিক্ষণে ছিলেন, এবং যিনি এখন মন্ত্রীত্বের কাছাকাছি।

 এই সত্য প্রকাশ মানে, দেশ কেঁপে উঠবে।

 সায়েম দ্বিধায় পড়ে গেলেন—“দেশকে কাঁপানো যাবে না, কিন্তু অন্যায়কে ছেড়ে দেওয়া যাবে?”

 তখন তার মা ফোনে বললেন,

 “বাবা, তুই যদি আজ ভয় পাস, তাহলে পরের প্রজন্ম সাহস কোথা থেকে পাবে?”

 এই কথায় যেন জোর ফিরে পেল সায়েম।

 তিনি ঘোষণা দিলেন সাংবাদিক সম্মেলনে—

 “এই চক্রের প্রতিটি সদস্যকে আইনের আওতায় আনা হবে।  আমি একজন সরকারি কর্মচারী হিসেবে শপথ নিচ্ছি—সত্যকে কোনোভাবেই চাপা পড়তে দেব না।”

আরো পড়ুন : 


থ্রিলার  অধ্যায় ১২: আদালতের কাঠগড়ায়:


 ঢাকার বিশেষ আদালতে দিনটি ছিল ব্যতিক্রম।  আদালত চত্বর ছিল কানায় কানায় ভরা—সাংবাদিক, ছাত্র, সাধারণ মানুষ—সবাই জানে আজ একটা ইতিহাস তৈরি হতে চলেছে।

 প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ড, সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভ, আর পুলিশের নিরাপত্তা—সব মিলিয়ে একটা যুদ্ধের মঞ্চ।

 আসামীপক্ষ থেকে শেষ মুহূর্তে প্রমাণ নষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছিল।

 কিন্তু রাকিবের ভিডিও ও মুনিমের সাক্ষ্য দাঁড়িয়ে গেল একটি অদম্য প্রমাণরূপে।

 রাকিব তার শেষ ভিডিওতে বলেছিল—

 “এই মামলাটা শুধু মুনিমের না, এটা সেই প্রতিটি মানুষের, যারা হারিয়েছে প্রিয়জনকে অন্ধকারের ব্যবসায়ীদের হাতে।  যদি এইবার ওরা ছাড়া পায়, তবে আগামীকাল হয়তো আপনি বা আমি থাকব না।”

 সালমানের চেহারায় তখন আতঙ্ক।  বিচারক যখন বললেন—

 “সালমান এবং তার সহযোগীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হলো,”

 তখন পুরো আদালতে করতালির ঝড় বয়ে যায়।

 কিন্তু রাজনীতিবিদ?  যিনি সবকিছুর নেপথ্যে?

 সায়েম সেই নামটি আদালতে প্রকাশ করেননি—তিনি সেই ফাইলটি প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ে জমা দেন, জনস্বার্থে গোপন তদন্তের জন্য।

 কারণ তিনি জানতেন—সিস্টেম বদলাতে গেলে সময় লাগে, কিন্তু শুরুটা সৎভাবে করতে হয়।


 থ্রিলার সমাপ্তি: সাহসের রক্তচিহ্ন:


 দুই মাস পর।

 মুনিম ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছে।  ঢাকায় একটি এনজিওতে যোগ দিয়েছে, যেখানে সে মাদকবিরোধী সচেতনতামূলক কাজ করছে।

 রাকিব এখন দেশের জনপ্রিয় এক অনুসন্ধানী সাংবাদিক।  তার লেখা বই “অন্ধকারের মুখোমুখি” হয়ে উঠেছে বেস্টসেলার।

 আর সায়েম রহমান?

 তিনি এখনো আছেন সেই পুরোনো চেয়ারে, ডিবি অফিসে।  কোনো পদোন্নতি চাননি।  শুধু চাইতেন—নিরাপদ একটা বাংলাদেশ।

 তিনি একদিন রাতের শেষে, তার মুঠোফোনে একটা বার্তা পান।

 “স্যার, আপনার জন্য আজ আমরা সাহসী হতে শিখেছি।  ধন্যবা— মুনিম।”

সায়েম জানতেন, যুদ্ধ শেষ হয়নি, কিন্তু আজ কটা যুদ্ধ জিতেছেন

সমাপ্ত 

📢 আপনার মতামত জানান:
এই গল্পটিতে  কি   আপনাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করে? নিচে কমেন্ট করুন ও পোস্টটি শেয়ার করুন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url