"একটি বিয়ের গল্প | গ্রামীণ বিয়ের অনুষ্ঠান ও বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বিয়ের রীতি"

বাংলাদেশের গ্রামের বিয়ে মানেই আনন্দ, সংস্কৃতি ও আবেগের মেলবন্ধন। মহিষার গ্রামের রুমা ও রাজিবের বিয়ের এই হৃদয়স্পর্শী গল্পে তুলে ধরা হয়েছে বিয়ের প্রস্তুতি, বৌভাত, আড়াই দিনের জামাই রীতি এবং গ্রামীণ জীবনের সৌন্দর্য।


একটি বিয়ের গল্প: মহিষার গ্রামের ভালোবাসা ও বন্ধনের স্মৃতি







 












x


মহিষার: সবুজের রাজ্য আর প্রাণের স্পন্দন


 **গ্রামের নাম মহিষার। ** একটুখানি সবুজের রাজ্য।  বয়ে চলা ছোট্ট খাল, তার ওপর বাঁশের সাঁকো, আর মাটির

পথগুলোকে দুই পাশে ঘিরে রাখা শিমুলগাছ সহ বিভিন্ন গাছ—সব মিলিয়ে যেন কোনো সবুজের রাজ্য।  মহিষারে

বিয়ের আয়োজন মানে শুধু এক পরিবারের উৎসব নয়; পুরো গ্রামটাই যেন সাজে।  আর এই গল্পের শুরু সেই

মহিষারের একটি ঘরে, যেখানে রুমা তার মা চাচিদের সাহায্যে বিয়ের পিঁড়িতে বসার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।  

রুমা: মিষ্টি হাসির মেয়ে

 রুমার বয়স একুশ।  মিষ্টি হাসি আর বড় বড় চোখের মেয়েটি সবার আদরের।  তার বাবা কৃষক, আর মা গৃহিণী। 

পরিবারটি খুব ধনী নয়, তবে অভাবও নেই, আগে গরিব কৃষক বলে রুমাদের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না, বড় দুই

ভাই বিদেশে যাওয়ার পর এখন রমরমা অবস্থা, তারপরেও বর্তমানে যে চড়া মূল্যের বাজার তাতে রুমার আব্বার

আত্মীয় স্বজন থেকে সাহায্য নিতে হয়েছিল।  রুমার মেধা আর সৌন্দর্য নিয়ে পুরো গ্রামেই কথা চলে।  পড়াশোনায়

ভালো হওয়া সত্ত্বেও সে কলেজের গণ্ডি পেরোতে পারেনি, কারণ বাবা-মা তার বিয়ের জন্য অধীর হয়ে উঠেছিলেন। 









বর: পাশের গ্রামের শান্ত ছেলে

 রুমার হবু বর রাজিব, পাশের গ্রামের ছেলে।  বয়স তেইশ।  তাদের কাপড়ের দোকান আছে।  রাজিবের পরিবারের

আর্থিক অবস্থা ভালো, কিন্তু তারা খুবই সাধারণ এবং মাটির কাছাকাছি থাকা মানুষ।  রাজিব এবং রাজীবের পরিবার

রুমাকে একবার দেখেই পছন্দ করেছিল, রাজীবের আব্বা রুমার আব্বার মতো বিনয়ী এবং পহেজগার, রুমাও

বিনয়ী এবং পহেজগার।  দুই পরিবারের মধ্যে কথাবার্তা চলল, আর খুব শিগগিরই বিয়ের দিন ঠিক হলো। 

 

 ---

 


বিয়ের প্রস্তুতি: গ্রাম জুড়ে সাজসাজ রব

মহিষার কোনো উৎসব মানেই বিশাল আয়োজন।  গ্রামে বিয়ে হলে সবার আগে শুরু হয় দাওয়াত দেওয়ার পালা। 

রুমার বাবা আর চাচা মিলে পুরো গ্রাম ঘুরে সবাইকে নিমন্ত্রণ করলেন।  আগে বিয়ের অনুষ্ঠান মানে যে মাটির

উঠোনটা সারা বছর শান্ত হয়ে থাকে, সেখানে শুরু হলো চৌকি পেতে মিষ্টি বানানোর কাজ।  নারীরা দল বেঁধে গায়

গান আর হাতে হাতে কাজ করেন।  সবার মুখে হাসি আর মনে আনন্দ কিন্তু এখন কাজ করে শহরের মতো বাবুর্চি,

ভাত মুর ঘনট, মাছ এখন থাকেনা,  থাকে শহরের মতো পোলাও, রোস্ট, গরুর রেজালা।  বাড়ি বাড়ি থেকে থালা

বাসন পাতিল আনা হয় না সব দেয় ডেকোরেটর্স।

 একদিকে বিয়ের জন্য প্যান্ডেল বানানো হচ্ছে, অন্যদিকে রান্নার কাজের আয়োজন চলছে।  গ্রামের কিশোর

কিশোরীরা ফুল এনে সাজানোর দায়িত্ব নিয়েছে।  আরেকদিকে বাজনা দলের সর্দার এসে মঞ্চের পরিকল্পনা করে

গেল।  

হলুদের অনুষ্ঠান: রঙের উৎসব


 আগে গ্রামের হলুদ মানে যুদ্ধ কে কাকে রাঙাবে, এখন সেই দিন নেই শহরের মতো শান্ত শিষ্ট কনে বরকে হলুদ

দেওয়া এবং খাবার দাবার ।  ছোট বেলার এক ঘটনা মনে পরে গেলো সপরিবারে এক আত্মীয়ের বিয়ের দাওয়াতে

গিয়েছিলাম, সে কি আনন্দ, সব মাটি হয়ে গেল , আমার বড় বোনের শাড়িতে রং দিল নতুন দামি শাড়ি, রং দিয়ে

যে রঙিন করারর চেষ্টা চলছিল মুহূর্তে তা বিবর্ণ হয়ে গেলো, আনন্দ কান্নায় পরিণত হলো, আমার বোনের সেকি

কান্না।

 রুমা নিজে যদিও খুব বেশি কথা বলে না, তবে তার মনে মিশ্র অনুভূতি।  একদিকে নতুন জীবনের শুরু,

অন্যদিকে পরিবারের কাছ থেকে দূরে যাওয়ার বেদনা।  তার মা বারবার চোখ মুছছেন, কিন্তু মুখে হাসি ধরে

রেখেছেন মেয়েকে শান্তনা দিতে।  

 —


বিয়ের দিন: মহাউৎসবের সূচনা

 বিয়ের দিন ভোর থেকেই পুরো গ্রামে এক অন্যরকম সাড়া।  রুমাকে সোনালী শাড়ি আর মায়ের বিয়ের গয়না

পরিয়ে সাজানো হলো।  সবার মুখে মুখে একটাই কথা—“রুমা আজ অপ্সরীর মতো লাগছে।”  মেয়ের হাত ধরে

তার মা অশ্রুসিক্ত চোখে বললেন,  

 “তুই ভালো থাকিস মা।  ওখানে সবকিছু মানিয়ে নিতে চেষ্টা করবি।”  

 বরযাত্রী এল বিকেলে।  রাজিব সাদা শেরওয়ানি আর লাল পাগড়ি পরে হাজির।  বরযাত্রীদের গান-বাজনার সঙ্গে

পুরো গ্রাম যেন মেতে উঠল।  রুমার ছোট ভাইরা বরের পথ আটকাল, গেট্ ধরা হলো, ৩০০০ টাকার বিনিময়ে

রাজিব ছাড়া পেল।  রাজিব হাসিমুখে টাকা দিল।  

 ---

 পান-সুপারি দিয়ে বিয়ের আসর শুরু হলো।  কাজি সাহেব এলেন।  বর-কনের সামান্য লজ্জা আর গ্রামবাসীর

হাসি-তামাশার মধ্যে বিয়ের কবুল-কবুল শব্দে ভরে উঠল বাতাস।  কনে পক্ষের মেয়েরা গায় গান গাইলো 

“আজ বউ হবে রুমা, সবার প্রিয় রুমা , নতুন ঘর আলো করবে, উঠবে তার নতুন সকাল!”  

 খাওয়া-দাওয়া শুরু হলো।  সাত পদে সাজানো ভোজের আয়োজন।  গরুর মাংস, পোলাও,  আর শেষ পাতে

দই আর রসগোল্লা।  বরপক্ষের সবার মুখে তৃপ্তি।  

 ---

বিদায়ের মুহূর্ত: কান্নার বন্যা

 সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো।  মধুর আলোয় সাজানো উঠোনটা হঠাৎ করেই যেন ভারী হয়ে উঠল।  বিদায়ের মুহূর্ত।  রুমা

চুপচাপ সবার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করল।  তার মা আর দাদি কেঁদে ফেললেন।  রুমা নিজেও চোখের জল

আটকে রাখতে পারল না।  

 “মা, আমি তো এখানে ফিরে আসব মাঝেমধ্যে।  এত কাঁদছ কেন?”  

 মা কেবল তার মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করলেন।  রুমাকে গাড়িতে তুলে দিয়ে রাজিব বলল,

“তোমার সবকিছু ঠিক থাকবে।  আমি আছি পাশে।”  


বৌভাত: নতুন জীবনের আগমন

 গ্রামের শেষপ্রান্তে বয়ে চলা নদীটা যেন জীবনের গল্প বলে।  তার পাশে ছোট্ট বাড়িটায় আজ বড়ো সরগরম। 

লালপেড়ে সাদা শাড়ি, আলতা মাখা পায়ের ছাপ, নতুন শাড়ির ঝলকানি, আর সবার মুখে খুশির ছটা—এ যেন এক

মধুর ব্যস্ততা।  আজ রুমার বৌভাত।  বাড়ির বড়ো ছেলে রাজিব তার নতুন বউকে নিয়ে এসেছে।  এই দিনটার জন্য

সবার অপেক্ষা যেন চিরন্তন।  

 আসলে গ্রামের এই ছোট্ট সমাজে বৌভাত মানে শুধু একটি অনুষ্ঠানের সীমাবদ্ধতা নয়; এটি একটি উৎসব।  এ

উৎসবে শুধু পরিবার নয়, গোটা গ্রামটাই জড়িয়ে থাকে।  রাজিবের বিয়ে হয়েছে আরেক গ্রামের মেয়ে রুমাকে

নিয়ে।  গ্রামের লোকজনের কাছে এ এক নতুন অভিজ্ঞতা।  সবাই দেখার জন্য ব্যাকুল, কেমন সেই বউ?  

 ভোরবেলায় বাড়ির উঠোনে ধানের গুঁড়ো দিয়ে আলপনা আঁকা শুরু হয়।  বুড়িমা বসে সবার তদারকি করছেন। 

"এইদিকে একটু গোল কর!  ফুলটা বড়ো কর," এমন পরামর্শ দিচ্ছেন।  বড়ো মেজো দিদিমা, পিসি, জা সবাই

মিলেনতুন বউয়ের জন্য পিঠে বানাচ্ছেন।  নারকেল, গুড়, ক্ষীর—সব যেন সেরা মানের।  "অত চিনি দিও না, রাজিবের

ক্ষীরে বেশি মিষ্টি পছন্দ নয়," বলেই যেন নতুন বউয়ের পছন্দকে আপন করে নেওয়া।  

 বাড়িতে আসার পরই আনুষ্ঠানিকভাবে রুমার বরণ শুরু হলো।  বড়ো পিসিমা তামার লুটোয় পান, নাড়ু, আর কলা

দিয়ে শুভ কাজ শুরু করলেন।  রুমাকে প্রথম দেখে গ্রামের সবাই যেন মুগ্ধ।  তার লম্বা কেশ, মিষ্টি হাসি, আর

চোখে লাজুক তাকানো—সবাই বলে, "রাজিব বউ দেখেই বিয়ে করেছে, তাই না?"  

 রুমা প্রথম থেকেই খুব মিশুকে।  বৌভাতের প্রচলিত নিয়ম জানে না ঠিকই, কিন্তু সে নিজের মতো করে সবার

সঙ্গে কথা বলছে।  বুড়িমাকে বলল, "দিদিমা, আপনার হাতের পিঠে খেতে ইচ্ছে করছে।  একটু খাবো?"  এই এক

বাক্যে যেন পুরো বাড়িটাই প্রাণ ফিরে পেল।  

 বড়ো উঠোনের এক কোণে রান্নার আয়োজন।  গ্রামে বিয়ে মানেই খাওয়াদাওয়ার বিশাল আয়োজন।  বিশাল

পেন্ডেলে চেয়ার টেবিলের মাদ্ধমে খাবারের  আয়োজন তার পাশে মাংস, মাছ, পোলাও, মিষ্টি—সবকিছু চলছে

সমান তালে।  রাজিবের বন্ধুরা রান্নার তদারকিতে ব্যস্ত।  কেউ কেউ আবার গুঞ্জন তুলছে, "নতুন বউ কী রান্না

করতে পারে?  পোলাও পাক জানে?"  

 রুমা নিজেও রান্নাঘরে ঢুকে গেল।  তার শাশুড়ি তাকে দেখে একটু বিরক্ত হয়ে বললেন, "তুমি এখানে কেন?  তোমার তো অতিথিদের সঙ্গে থাকতে হবে।"  রুমা হেসে বলল, "মা, আমি দেখতে এসেছি।  যদি দরকার হয়, সাহায্য করব।"  শাশুড়ির মুখে প্রশ্রয়ের হাসি ফুটে উঠল।  "তুমি দেখছো, এটুকুই যথেষ্ট।"  

 দুপুরে গ্রামের সবাই এসে হাজির।  বউভাত মানে তো গ্রামের পেটপুজো।  বিশাল পেন্ডেলে চেয়ার টেবিলের মাদ্ধমে খাবারের  আয়োজন।  নতুন বউ সবার সামনে আসতেই, কেউ বলে, "নতুন বউকে মিষ্টি খাওয়াব না?"  বুড়িমা হাসতে হাসতে বললেন, "খাওয়াবে তো বটেই।"  

 রুমা নিজে সবার প্লেটে পোলাও তুলে দিচ্ছিল।  এক বৃদ্ধা হাত ধরে বললেন, "বউমা, তুমি আমাদের বাড়ির লক্ষ্মী।"  রুমা লজ্জায় মাথা নিচু করে বলে, "আপনাদের আশীর্বাদেই সব হবে।"  

 বৌভাত শুধু খাওয়া নয়; বিকেলে গান, আড্ডা, আর ছোটখাটো প্রতিযোগিতাও হয়। রাজিব আর রুমাকে নিয়ে গ্রামের মেয়েরা "জামাই-বউ" খেলার আয়োজন করল।  পাত্র-পাত্রীকে নানা প্রশ্ন করে মজা নেওয়া হলো।  রুমা মিষ্টি হাসি দিয়ে সবাইকে মাতিয়ে রাখল।  

 রুমা আর রাজিব গল্প এখানেই শেষ নয়।  বৌভাতের মাধ্যমে যে বন্ধন গড়ে উঠল, তা শুধু দুটি মানুষের নয়, দুটি পরিবারের।  রুমা গ্রামের মেয়ে গ্রামীণ জীবনের স্বাদ নিতে পছন্দ করে।  আর গ্রামের লোকেরাও তাকে আপন করে নিয়েছে।  বুড়িমা তো বারবার বলেন, "রুমা এ বাড়ির আলোক।"  

 বৌভাত শেষ, কিন্তু সেই দিনের স্মৃতি রয়ে গেল সবার মনে।  জীবনের এই সরলতা, এই আনন্দই তো আসল সম্পদ।  রুমার বাড়ি থেকে মেয়ে পক্ষ যারা এসেছিলো সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করে রাজিবকে নিয়ে নিজেদের বাড়িতে চলে যান, রাজীব এবং রুমা রুমার বাপের বাড়িতে চলে গেলো আড়াই দিনের জন্য। 



 আড়াই দিনের গল্প


 বৌ ভাতের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর শ্বশুরবাড়ি থেকে রাজিবকে আমন্ত্রণ জানানো হয় আড়াই দিন থাকার জন্য।

  জামাই যখন শ্বশুরবাড়িতে যান, তখন তার জন্য বিশেষ খাবারের আয়োজন করা হয়।  এ সময় জামাই যেন শ্বশুর

বাড়ির সদস্যদের সঙ্গে স্বচ্ছন্দে মিশে যেতে পারেন, সে লক্ষ্যেই তাকে নানা কাজে যুক্ত করা হয়।  এসব কাজে

অন্যতম হলো বাজারে যাওয়া এবং মাছ কিনে আনা। 

 বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে মাছ ও বাজারের সাথে অনেক আনন্দঘন মুহূর্ত জড়িয়ে আছে।  নতুন জামাইয়ের জন্য

\মাছ কিনতে বাজারে যাওয়ার অভিজ্ঞতা একদিকে যেমন হাস্যকর, তেমনি হৃদয়গ্রাহী।  রাজিবকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ির

পরিবারের লোকেরা স্থানীয় বাজারে যান।  সেখানে জামাইয়ের ভূমিকা থাকে প্রধানত মাছ কেনার ক্ষেত্রে দরদাম

করা।  যদিও অনেকে অভিজ্ঞ না থাকার কারণে প্রথম দিকে একটু সংকোচ বোধ করেন, তবে এটি খুবই আনন্দময়

একটি অভিজ্ঞতা হয়ে ওঠে।  

 মাছ বাঙালি খাবারের অপরিহার্য অংশ।  জামাই যখন শ্বশুরবাড়ির জন্য বাজার করে, তখন সেটি কেবল একটি

সাংস্কৃতিক আচার নয়, বরং দুই পরিবারের মধ্যে এক বন্ধনের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়।  শ্বশুরবাড়ি থেকে বিশেষ কোনো

মাছের কথা বলা হলে, জামাই সেগুলো কেনার চেষ্টা করেন।  বড় আকারের রুই, কাতলা, কিংবা ইলিশ মাছ কেনা

সাধারণত এই ধরনের অনুষ্ঠানের একটি আকর্ষণীয় দিক।  বাজার থেকে ফিরে আসার পর, শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা

খুশি মনে সেই মাছ দিয়ে বিশেষ রান্না করেন, মাছ শশুর বাড়ির যে মেয়েরা কাটে তাদের জন্য উপহার থাকে মাছের

কানে ৫০০ টাকার একটি নোট গুঁজে দেয়া হয়, যা একসঙ্গে উপভোগ করা হয়। 

 রাজীবের জন্য আড়াই দিনের সময় শ্বশুরবাড়িতে শুধু দায়িত্ব পালন নয়, বরং একটি পরিবারের সদস্য হয়ে ওঠার

জন্য উপযুক্ত সময়।  মাছ কেনা, বাজার করা, এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে হাসি-মজার মধ্যে দিয়ে এই সময়

অতিবাহিত হয়।  শ্বশুরবাড়ির সবাই জামাইয়ের সঙ্গে মজার গল্প করে, কখনো তাকে রান্নাঘরে ডেকে নিয়ে মজার

রান্নার কৌশল শেখায়। 

 এই আড়াই দিনের প্রথা শেষ হওয়ার পর রাজিব যখন নিজের বাড়ি ফিরে যান, তখন তার সঙ্গে নিয়ে যান শ্বশুর

বাড়ির ভালোবাসা, যত্ন, আর অসাধারণ স্মৃতিগুলো।  দুই পরিবারের সম্পর্ক আরও গভীর ও আন্তরিক হয়।  এই

রীতির মাধ্যমে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধন আরও দৃঢ় হয়ে ওঠে। 

 রাজীবের জন্য আড়াই দিনের প্রথা একটি মজার ও ঐতিহ্যবাহী রীতি, যা পরিবারে নতুন সদস্যের আন্তরিক

অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে।  মাছ কেনা ও বাজার করার মতো ছোট কাজগুলো এ সময় আনন্দদায়ক হয়ে ওঠে। 

এটি শুধু নতুন জামাইয়ের জন্য নয়, পুরো পরিবারের জন্যই বিশেষ মুহূর্ত তৈরি করে।  বাংলাদেশের এই ধরনের

প্রথাগুলো আমাদের সামাজিক বন্ধনের সৌন্দর্যকে আরও সুন্দরভাবে তুলে ধরে। 

 --- 


 নতুন সংসার: নতুন স্বপ্ন


রাজিব আর রুমার সংসার শুরু হলো।  মহিষারের সেই ছোট্ট গ্রাম থেকে আরেক গ্রামের ব্যস্ত জীবনে প্রবেশ।  রুমা

ধীরে ধীরে নিজেকে মানিয়ে নিল।  তার হাসি আর ভালো ব্যবহারে শ্বশুরবাড়ির সবাই তাকে আপন করে নিল।  

 রুমা আর রাজিব একসঙ্গে নতুন স্বপ্ন বুনতে শুরু করল।  তাদের এই জীবনের গল্প একদিন হয়তো নতুন কোনো

গল্পের শুরু করবে।  

 --- 




উপসংহার: ভালোবাসা আর বন্ধনের অবিচ্ছেদ্য গল্প

 এই গল্প শুধু রুমা আর রাজিবের নয়; এটা আমাদের সমাজের, আমাদের সংস্কৃতির এক টুকরো প্রতিচ্ছবি। 

ভালোবাসা, দায়িত্ব, এবং নতুন জীবনের স্বপ্ন মিলে তৈরি হয় এমনই সুন্দর গল্প।



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url