দুঃসময়

 ২৪/০৬/২০২৫

কখন যে মানুষ দুঃসময়ের মধ্যে পড়বে তা নিজেও সে জানে না। সকালে সূর্যের সুন্দর আলো দেখে বোঝা যায় যে, একটু পরেই প্রচন্ড ঝড় তুফান শুরু হবে তেমনি কোন মানুষই জানে না যে একটু পরে তার জীবনে নেমে আসবে দুর্যোগের ঘন ঘটা। 

 এশার পরে প্রত্যেকদিনই রাতে একটু আড্ডা দেওয়া হয়।   আড্ডা দিতে দিতে প্রায় সময়ই এগারোটা কিংবা সাড়ে এগারোটা বেজে যায়। বাসায় আসার পরে খাবার খাওয়া, হাত মুখ ধুয়ে বিছানায় যাওয়া এ কাজগুলো করতে করতে একটা বেজে যায়।  প্রতিদিনই চিন্তা করা হয় আগামীকাল যেভাবেই হোক সাড়ে এগারোটা অতিরিক্ত বারোটার মধ্যে শুয়ে পড়বো।  কিন্তু পরের দিনেই, একই ঘটনা, সেই রাত একটা পাড়।  এভাবেই দিনগুলি কাটছে । 

গতকাল এভাবেই কাটবে ভাবা হয়েছিল কিন্তু বিধিবাম। 





১ .

১১.৩০-৩.৩০


বাসায় এসে দেখা গেল, ছেলে পরের দিন পরীক্ষার জন্য দুটো পর্যন্ত পড়ার ডিসিশন নিয়েছে। রুম আলাদা আমার সাথে এর কোনো যোগাযোগ নেই। সমস্যা যেটা সেটা স্ত্রী, তাকে পড়ার সময় সঙ্গে দেয়। সে এসে পাশে ঘুমাতে গেলে আমার পাতলা ঘুম ভেঙে যাবে।  বিছানা করে শুয়ে পড়লাম পাশে স্ত্রী নেই সে ছেলের পড়ার ব্যাপারে সহযোগিতা করছে। দুইটার দিকে ছেলে ঘুমাতে চলে গেল।  বলে গেল,

" মা আমার পয়েন্ট গুলো একটু দাগিয়ে রেখো কাল সকাল বেলা উঠেই পড়ে নেব। "

 তার মা তার পয়েন্টগুলো দাগানো শুরু করল, পরদিন সকালে উঠে পরীক্ষা দেওয়ার আগে ছেলে পড়বে বলে।  এভাবে তার তিনটা পর্যন্ত সময় কেটে গেল, তিনটা বাজে কাজ শেষ করে তখন গভীর রাতে সে শুতে আসলো। 

ঘুম খুব পাতলা কোন একটা স্পর্শেই ঘুম ভেঙে যায় সে ঘুমানোর সময় তার স্পর্শ গায়ে লাগতেই সভাপতির ঘুম ভেঙে গেল।  যা হোক ঘুমের ভান ধরে মটকা  মেরে পড়ে রইলো।  এভাবেই কেটে গেল আরো আধা ঘন্টা ঠিক সাড়ে তিনটায় শুরু হলো নতুন ঘটনা। 



২.

৩.৩৩-৩.৪৫

তিনটা তেতত্রিশে  এর সময় ফোন এলো মোবাইলে।  এ সময় কে ফোন করল? রাতের ফোন মানেই বিপদ আপদ , হয় মরার খবর , নাহয় অসুখের খবর , আর কিছু নাহলেও ছোটোখাটো দুর্ঘটনা।  মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দেখা গেল সড়ক জন কল্যাণ  সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফোন করেছেন।  এত রাতে ফোন নিশ্চয়ই কোন বড় ধরনের সমস্যা, দ্রুত কোনটি ধরা হলো । সে বললো ,

"সভাপতি সাহেব কাফরুল থানা থেকে পুলিশ এসেছে, একজন ডাকাত ধরতে, তার ছবি দেখাচ্ছে তাদের লোক সংখ্যা খুবই কম তাই এলাকার কিছু লোক তারা চাচ্ছে যাতে কেউ এটা মনে করতে না পারে যে, পুলিশের বেশে ডাকাতি করছে,  তাই তারা এলাকাবাসীকে সাথে নিতে চায়।  তাই তারা সাধারণ সম্পাদক হিসাবে আমাকে সভাপতি সাহেবকে মানে  আপনাকে এবং বেশ কিছু লোককে ফোন দিতে বলল। 

একটু  নামতে হয় যে আপনাকে। "

 পাশে শুয়ে থাকা  স্ত্রী বলল,

 "পুলিশ এসেছে তোমার কি ?তোমার যাওয়ার দরকার নেই।  সভাপতি হয়োছ তো কি হয়েছে , এই গভীর রাতে  যেতে হবে?" 

আমি বললাম,

" দায়িত্ব যখন নিয়েছি তখন তো যেতেই হবে। "


৩.

৩.৪৫-৩.৫৫

 বের হলাম, রাস্তায় বের হয়ে দেখি, কোথায় কি? রাস্তা একদম শুনশান ফাঁকা, আবার ফোন দিলাম সাধারণ সম্পাদককে, সে বলেলো ,

" ঘটনা ঘটেছে , দপ্তর সম্পাদকের বাড়িতে।" 

 দপ্তর সম্পাদক সাহেবের বাড়ি সভাপতি সাহেবের বাড়ির ঠিক অপজিটে।  নেমে দেখলেন দরজা বন্ধ কোন লোকজনের সাড়া নেই তাহলে কি তার সাথে সাধারণ সম্পাদক ঠাট্টা করছে? ঘরে ফিরে আসলো সে । 

সভাপতি অবাক হয়ে তাকে  আবার ফোন দিলেন,

" কেন ঠাট্টা করছেন  আমার সাথে, আমি তো কোন লোকই দেখছি না। "

সাধারণ সম্পাদক বলল,

 তারা তো আমার বাড়ির সামনে। "

 সাধারণ সম্পাদকের বাড়ি রোডের পশ্চিম দিকের  শেষ মাথায়।  বেশ কিছুটা দূরে। 

সভাপতি বললেন,

" সরি এত রাত্রে আসতে পারবো না। আপনি এটা দেখুন। " সাধারণ সম্পাদক বলল, 

"আমি তো দেখতে চাচ্ছি কিন্তু তারা আরও কিছু লোক জড়ো করতে বলছে। "

 সভাপতি বললো,

" ঠিক আছে ধর্ম ও সংস্কৃত বিষয়ক সম্পাদক কে কল করুন, তাকে থাকতে বলুন। "

 ধর্ম ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অত্যন্ত উদারমনা এবং কর্মঠ রাত দুইটা তিনটা যখনই তাকে ডাক দেওয়া হবে, 

সে এসে হাজির হবে। 

 সভাপতি সাহেব তাকে ফোন দিলেন,বললেন ,

" সাধারণ সম্পাদক বলছে কাফরুল থানা থেকে পুলিশ এসেছে। "

 সে বলল,

" হ্যাঁ, আমাকেও ফোন দিয়েছিল আমি নামছি আপনি দয়া করে একটু নামুন। "

 ধর্ম ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক সভাপতির  কথা শুনে বের হওয়ার মনস্থ করেছে, সভাপতি  আর ঘরে থাকে  কি করে।  স্ত্রী বলল,

" আমিও যাব। "

 সভাপতি বললেন,

" এটা আমার ব্যাপার, আমাকে দেখতে দাও।"

এই রাত্রে কোন মতেই তোমার যাওয়া চলবে না। "

সে প্রায় রেডি হয়ে গিয়েছিল তার  কথায় একটু নিরাশ হলো তারপরেও মান্য করে থেমে গেল তিনি শার্ট টি 

গায়ে চাপিয়ে আঙ্গুল

দিয়ে  চুল আঁচড়িয়ে, লুঙ্গি এবং প্লাস্টিকের স্যান্ডেল পড়ে রওনা দিলো। 



৪.

৩.৫৫-৪.১০

নিচে নেমে দেখলো  কিছুক্ষণ আগে যে নাইটগার্ড কে দেখা যাচ্ছিল না সে চেয়ারে বসে আছে।  তিনি  বললেন,

" কি হয়েছে পুলিশ এসেছে কেন?" 

সে বলল,

 আমাদের রাস্তার  মেনরোডের ওই পারে কিউট আলীর বাসায় এ ঘটনা, তার চারতলায় ডাকাত থাকে।  পুলিশ ছবি

নিয়ে এসেছে।  তারা গেট পিটানোর পর, উপর থেকে একটা পোটলা ফেলেছে, যেটার ভিতরে চাপাতি ছুরি রামদা

ছিল। পুলিশ কেচি গেট খুলতে পারছে না বলে ভিতরে যেতে পারছে না।  তাই তারা এলাকাবাসীর সাহায্য চেয়েছে। "

সভাপতি জানতে চাইলো,

"এখন তারা কোথায় আছে?"

 সে বলল,

" এখন তারা শেষ মাথায় সেক্রেটারি সাহেবের বাসায় সামনে আছে। "

সভাপতি সাহেব  জোর কদমে  হেঁটে সাধারণ সম্পাদকের বাসার সামনে গেলো। দেখলো, সাংস্কৃতিক সম্পাদক

সেখানে দাঁড়িয়ে আছে আর দুটো লোক একজনের পুলিশের ড্রেস পরা আরেকজন টি-শার্ট পরা কফি  কালারের

টি শার্ট  , অন্ধকারে যা কালোর মতই দেখা যাচ্ছে।  সভাপতি  তাকে বললেন,

"আপনারা রাস্তার ওপারে এক বাসায় ডাকাত দেখেছেন এখানে আমাদের করার কি আছে? ওটাতো অন্য থানা,

অন্য ওয়ার্ড, অন্য পোস্ট অফিস আমাদের সীমানার মধ্যে এটা নেই আমরা কিভাবে অন্যের জায়গায় গিয়ে নাক

গলাবো?"

 পরে জানতে পেরেছি টি-শার্ট পরা লোকটি  কাফরুল থানার ওসি।  সে আমাকে বলল,

" ভাই যদি সে কালকে রাস্তার এ  পারে এসে আপনাদের এখানে ডাকাতি করে তখন কি আপনারা অন্য থানা অন্য

ওয়ার্ডের  হিসাব করবেন? আমাদেরকে একটু সহায়তা করুন। "


৫ .

৪.১০-৪.১৫

সভাপতি  আরো দুই চারটা কথা তাকে বলতে চেয়েছিলেন ।সাংস্কৃতিক সম্পাদক তাকে  রিকোয়েস্ট করলো,

 "কথা  না বাড়িয়ে আসুন আমরা তাদেরকে সাহায্য করি। কারণ, ওই বাড়িটাও আমাদের পরিচিত কাকার  বাড়ি

যিনি একসময় আওয়ামী লীগের নামকরা লিডার ছিল।  এখন মারা গিয়েছে কিন্তু সে তো এলাকাবাসীর জন্য অনেক কষ্ট করেছে।  আর পাঁচ জনের মত সে তো টাকার পিছে দৌড়ায় নাই।  সে তো কারো কোন ক্ষতি করে নাই।

তাহলে তার বাড়ির যখন ঘটনা এখানে আমরা না গেলে কেমন দেখা যায়?" 

সভাপতি  চিন্তা করলেন, ঠিকই তো বলেছে কিউটালি কাকা তো আমাদের সব সমস্যাতে  দৌড়ে  এসেছে এখন

আমরা না গেলে কেমন দেখা যায়।  যা হোক, যেতে হবে। এরমধ্যে সাধারণ সম্পাদক ও

তার বাড়ির একজন ফ্লাট ওনার সাবেক সাব ইন্সপেক্টর  রহমত ভাই সাথে এসেছে যাহোক ওরা চারজন হয়ে গেলো।

  চারজন কাফরুল  থানার ওসির পিছনে পিছনে যেতে লাগলো।  ছোট খাটো মানুষ হলেও ওসি সাহেব বেশ

চটপটে এবং এনার্জিটিক।  গভীর রাতে তখন চারটা চারটা দশ বাজে আমরা চারজন তারা দুইজনে ছয় জন

মিলে কিউট আলী  কাকার  বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালাম।  ওখানে তাদের আরো আটজন মতো লোক রয়েছে।

চারজন গেটের কাছে আর চারজন গেটের বাইরে কিন্তু কেচি গেট কেউ খুলছে না।  তারা ধুমধাম পিটিয়ে যাচ্ছে

একটা বাড়িতে যদি মৃত ব্যক্তি ও থাকে তাহলে এই পিটানিতে তার জেগে ওঠার কথা।   কিন্তু কারো কোন সারা

পাওয়া যাচ্ছে না।


৬.

৪.১৫-৪.২০

সভাপতি বললেন,

" ভাই এটা তো অন্য এরিয়া যদিও আমাদের থেকে পাঁচ হাত দূরে। আমরা তো এই এলাকার কেউ না আপনি এই

এলাকার থানায় কেন খবর দিচ্ছেন না?"

 তারা বলল,

" সবুজবাগ থানায় ফোন করেছি এখনই ফোর্স আসছে খিলগাঁ থানায়  ও ফোন করেছি এই ফোর্স এল বলে। "

সভাপতি বললেন,

" তাহলে তো ঠিকই আছে। "

বলতে বলতেই ১০ জন মত লোক হেঁটে আসছে কাছে এসে বলল,

" খিলগা থানা থেকে এসেছি। "

 ওসি সাহেব  উনাদের যা বুঝানোর বুঝিয়ে বলল এর মধ্যে এক মাইক্রোভর্তি পুলিশ এসে হাজির হলো। 

তারা বলল,

" সবুজবাগ থানা থেকে এসেছি। "

 সমিতির ওনারা  হাঁফ  ছেড়ে বাঁচলেন।  পিছনে গিয়ে একটা গ্রুপ দেখলো কোন পথ আছে কিনা, যেখান থেকে

পালিয়ে যাওয়া যায়।  এমন কোন স্থান নেই যা তারা দেখতে পেলো।  সাইডে আশেপাশে সব তারা চেক করলো। 

ছুড়ি চাকুর ব্যাগটা পাশে রাখা ছিল।    ভিতরে কি আছে না আছে বুঝা গেল না যা হোক ওসি সাহেব যখন বলেছেন

রাম দা, ছুরি, চাপাটি , তাই ধরে নেয়া হলো  ।


৭.

4.20-4.30

ডাকাডাকি, হই হল্লা, পিটাপিটির পরও কেউ দরজা খুলতে এগিয়ে এলোনা।  সভাপতি  সংস্কৃতিক সম্পাদক

সাহেবকে বললেন,

" কিউটালি চাচার ছেলে বাবুকে একটা ফোন দাও, ও নিশ্চয়ই দরজা খুলে দেবে?" 

সে বলল,

" ও তো আওয়ামী লীগ করতো।  তাই বেশিরভাগ সময়ই বাসায় থাকে না, কারণ বর্তমানে তারা তো বেশিরভাগ

সময়ই পলাতক  থাকে। "

সভাপতি বললেন,

" কিউটালি চাচা মানুষের উপকার করেছে, তার ছেলে কেন ভয় পাবে?" 

সে বলল,

" ধরার পরে বুঝা যাবে কে ভালো কে মন্দ কিন্তু সেটা তো অনেক পরের কথা বিচারের আগেই তো অনেক হেনস্থা

হতে হবে।  তাই দূরে সরে থাকে। " 

সভাপতি যা বোঝার বুঝে গেল।  দোতলায় একজন লোক দেখা গেল, সে কাপড়ের ফাঁকে দিয়ে গোপনে উঁকি

দিচ্ছে।  সভাপতি  পুলিশকে বললো,

" উনাকে ডাক দিয়ে দরজা খুলে দিতে বলুন। 

 পুলিশ চিৎকার দিয়ে তাকে ডাকার পরে, সে বলল, "আমাদের কাছে চাবি নেই।" 

বুঝা গেলো  মিথ্যা কথা, কারণ এখন যদি জরুরিভাবে কাউকে বাইরে যেতে হয় তাহলে সে কিভাবে বাইরে যাবে

সুতরাং সে বুঝা যাচ্ছে মিথ্যা বলছে।  যা হোক তারা প্রথমে রড খুজলো, পেল না, শাবল খুজল, পেল না।  অতঃপর

ইট দিয়েই তালার মধ্যে বাড়ি শুরু করলো। 

বেশ কিছুক্ষণ পিটানোর পরে তালা খুলে গেল।  দরজা খুলে দ্রুত গতিতে তারা চারতলার দিকে চলে গেল।  সাথে

সাংস্কৃতিক সম্পাদক সাহেবও গেলেন।  সভাপতি ও  সাধারণ সম্পাদক সহ আরো ৪-৫ জন পুলিশ ও রহমত

সাহেব  নিচে রইলো।  এর মধ্যে আযান দিয়ে দিল, ফজরের পরে সভাপতি বললেন, 

" আমি নামাজে যেতে চাই, আপনারা তো দরজা খুলেই ফেলেছেন, এখন উপরে গিয়ে তাদের দরজা ভেঙে ফেলা

কোন ব্যাপারই না। "

রহমত ভাই বলল,

" আপনি চলে যান আর সাধারণ সম্পাদক উনিতো অসুস্থ উনিও চলে যাক ।"

সাধারণ সম্পাদক বলল,

" রহমত ভাই আপনাকে রেখে কিভাবে যাই?"

 রহমত ভাই বলল,

" আমি তো আছি কিছুক্ষণ পরে আমিও নামাজে চলে যাব।  যেহেতু দরজা দিয়ে তারা ঢুকে পড়েছে আর শটকে

পড়ার কোন রাস্তা নেই সুতরাং তারা তাদের কাজ সমাপ্ত করতে পারবে। আমাদের আর চিন্তা না করলেও চলবে।"

সভাপতি আর সাধারণ সম্পাদক চলে আসলো।


৮ .

ফজরের নামাজটা পড়েই সভাপতি  শুয়ে পড়লো।  সকালবেলা যথারীতি কলেজে চলে গেলো।  ছেলেকে ড্রপ

দিয়েই এসেই সাংস্কৃতিক সম্পাদক  কে ফোন দিলো,

" কি খবর ভাই? 

সে বলল,

" সবকিছু সুন্দর মত সমাধান হয়েছে। " 

সভাপতি বললো,

"যেমন ?"

সে বলল,

“ " চারতালার দরজা জোরে লাথি দেওয়ার পরে ওরা খুলেছিল।  খোলার পরে বাড়ির ভিতরে গিয়ে বেশ কিছু চাপাতি

ছুরি রামদা পাওয়া গিয়েছিল।  দুটা ছেলে ছিল।  ওদের ছবির সাথে তাদের কোন মিল নেই।  ওরা  সাথে করে যাকে

নিয়ে এসেছিল তাকে দেখালো, ও দেখার পরে বলল,

" এরাও ডাকাত। "

 তবে প্রধানটাকে ধরা গেল না।  প্রচুর ছুড়ি চাকু পাওয়া গেল সেগুলো, ও ওদের দুজনকে নিয়ে তারা নেমে আসলো।

মহিলাদের কিছুই বলল না।  তিন তালায় বাড়িওয়ালা থাকে।  তারা আওয়ামী লীগের সুতরাং সবুজবাগ থানার ওসি

ওখানেও হামলা দিতে বলল। 

কাফরুল  থানার ওসি বলল,

" আমরা কোন রাজনীতির সাথে জড়িত এমন কাউকে ধরতে আসিনি।  যাদেরকে ধরেছি তাদেরকে নিয়েই চলে

যাব। নতুন কাউকে নেওয়ার সুযোগ আমাদের নেই।" আমি বলেছি তাদের, 

কিউটালি চাচা অনেক ভাল লোক ছিল সে দলীয়ভাবে কোন টাকা আয় করে নাই, অবৈধ টাকা-পয়সাও তার নেই,

সে মানুষের উপকার করেছে।  কখনো দলীয় জোর দেখায় নাই।  তার মত লোকে বেঁচে থাকতে এলাকার সবাই

সমীহ  করত ভালোবাসতো,  আজকে সে নেই তার ফ্যামিলিকে অসুবিধা করা এলাকাবাসী ভালো চোখে দেখবে না "

 সবুজবাগ থানার ওসি সাহেব বুঝতে পারলেন।  এবং তারা নিচের দিকে নামতে থাকলেন আশেপাশের প্রত্যেকটি

দরজা তারা নক করে খুললেন এবং দরজা না খোলার কারণে সবাইকে ধমকালেন। শুধুমাত্র কিউটালি চাচার দরজা

ছাড়া। 

সে বলল,

" তারা আসামিদের গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরে আমি বাসায় এসে ফজরের নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। 

আমার সাথে রহমত ভাই ও চলে এসেছিল বাসায় গিয়ে সেও হয়তো ফজরের নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। " "


৯ .

দুপুরে জোহরের নামাজ পড়তে মসজিদে যেয়ে একটু অবাক হলেন সভাপতি। কেউ এ ব্যাপারটা জানে বুঝতে

পারা গেল না।  খোঁজ নিয়েও দেখা গেল কেউ কিছু জানে না। তাহলে আমাদের এলাকা কি গুলশান বনানী হয়ে

গেল? কেউ কারো খোঁজ রাখে না।  এত বড় একটা ঘটনা অথচ কেউ জানে না একটু আশ্চর্য ব্যাপার নয়?

ঘটনাটি জানানোর পর অনেকেই অবাক হল।  সভাপতির  স্ত্রী বলল,

" তুমি এত মাথা ঘামাও কেন? 

আর কি কেউ নেই? "

সভাপতি তাকে বললো,

" দেখো আমি যখন সভাপতি হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলাম তখনই শপথ নিয়েছিলাম এলাকাবাসীর সুখ-দুঃখে পাশে

থাকবো। কারণ আমি তাদের নেতা হতে চেয়েছি, নেতা  হতে গেলে সহনশীল হতে হবে। মানুষের সাথে মিশতে

হবে।  সুখে দুঃখে পাশে থাকতে হবে। হামবড়া ভাব দেখালে চলবে না।  আজকে প্রতারণা করলে কালকে গর্তে লুকাতে

হবে।  আমরা এসব ঘটনা সবসময়ই দেখি কিন্তু তা থেকে শিক্ষা নেই না।  নিতে হবে, একদিন না একদিন শিক্ষা

নিতে হবে।  কিছু কিছু লোক আছে তারা আসনে বসতে চায় কিন্তু কাজ করতে চায় না।  যখন সভা হয় বড় বড়

কথা বলে। কিন্তু কাজের সময় কখনোই তাদের পাওয়া যায় না।  পরে অভিযোগ করলে বলে,' আমাকে তো ডাক

দেন নাই?' আমি মনে মনে বলি আমাকে কে ডাক দিয়েছে? 

আমাকে যখন ডাক দেয় নাই নিজেই মনের ডাকে সাড়া দিয়ে এসেছি তাহলে তোমার মনে কেন ডাক দেয় না।

মুখে বলি না কিন্তু মনে মনে বলি।  কারণ কাউকে কষ্ট দেওয়া মানুষের মনুষত্ব নয়।  আর এটা আমার কোন কাজ

নয়।

নেতৃত্ব নেওয়াটা বড় নয় , অর্পিত  কাজ তা সঠিকভাবে পালন করা বড়।  তাদেরই মানুষ সব সময় মনে রাখে যারা 

কথা বলল অথচ কাজের সময় নেই একসময় না একসময় তারা মানুষের কাছে ধরা পড়ে 

উপরে না কিছু বলতে পারলেও মনে মনে তারা নিন্দনীয় হয়। ভালো কাজ করতে গেলে সমস্যা হবে।  শ্রম দিতে

হবে কষ্ট হবে সেটা স্বাভাবিক। "

স্ত্রী চুপ হয়ে গেলো। 


১০.

 কিন্তু কখনো  অযাচিত ভাবে কিছু সমস্যা এসে কাঁধে পড়ে যা গ্রহণ করা একেবারেই অসম্ভব এখানেও সেটা

হয়েছিল তার আগে কি হয়েছিল সেটা বলে নেই। 

প্রথমবার যখন সভাপতি হয়েছিল, তার কিছুদিন আগে সভাপতি  তখন সহ-সভাপতি, এলাকার একটা পরিচিত

ফ্লাটে দুর্ধর্ষ চুরি বা ডাকাতি সংগঠিত হয়েছিল এর কিছুদিন পরে সাধারণ সভা হলো সহ সভাপতিকে  সবাই মিলে

সভাপতি করল। প্রথমবারের সভাপতি, মনের মধ্যে এক চাঞ্চল্য কাজ করছিল রাত দুইটার সময় এক প্রতিবেশীর

ফোন আসলো,

" ভাই চোর ধরেছি তাড়াতাড়ি আসুন। "

 দৌড়ে রাস্তায় চলে গেলে, এক ছেলেকে  নিয়ে সে ও আরেক প্রতিবেশী দাঁড়িয়ে আছে বলল,

" এ জালনার গ্রিলের পাশে উঠে দাঁড়িয়ে রয়েছে,নিশ্চয়ই গ্রিল দিয়ে কিছু হাতাতে চাচ্ছে। " সাথে সাথে ওর গালে

একটি চর বসিয়েদিলো সভাপতি। বললো,

" বদমাশ কেন এ কাজ করতে গেলি।"

ছেলেটা বললো,

"না চাচা আমি কিছু করিনি। সাধারণ সম্পাদক একটা লাঠি নিয়ে হাজির।  বলল,

" চোর কখনো স্বীকার করে। "

বলেই ধুম ধুম পিটানো শুরু করলো 

ও মা রে বাবারে বলে চিৎকার শুরু করলো সবাই মিলে আমরা তিনজন দুই প্রতিবেশী মিলে পাঁচজন  আর ছেলেটি

একা।  ছেলেটি চিৎকার দিচ্ছে, এর মধ্যে কিছু টহল পুলিশ এসে হাজির হলো তার মধ্যে একজন সাব ইন্সপেক্টর

ছিল তারা বলল,

" এভাবে মারছেন কেন?"

বলা হলো,

" দুদিন আগে মারাত্মক চুরি হয়েছে ও ওয়ালে দাঁড়িয়ে জানালার গ্রিলে উঁকি ঝুঁকি মারছে তাই ওকে একটু পিটিয়ে

শায়েস্তা করছি যাতে ভবিষ্যতে এমন কিছু আর না করতে পারে। "

সাব ইন্সপেক্টর বলল,

" দেখুন উল্টাপাল্টা পিটান  দিয়ে আবার ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনবেন না।"

চিন্তা করা হলো  ঠিকিতো বলছে। বলা হলো ,

" ঠিক আছে আপনারা থানায় নিয়ে যান। "

 তারা বলল,

" আচ্ছা নিয়ে যাচ্ছি কিন্তু বাদি কে?"

সভাপতি বললো ,

" এটা আবার কেমন প্রশ্ন? তাহলে আপনারা  কি কাজের জন্য?" 

সে বলল,

" আমি থানায় নিব। আর  তার আই . ও হবো।  কিন্তু বাদী তো লাগবে? "


১১.

 পিছে তাকিয়ে দেখি প্রতিবেশী ভাই ও যার বাসায় উঁকি মারছে সেই ভাই গায়েব। এখন দাঁড়িয়ে রয়েছি আমরা

তিনজন।  সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক তখন সে দপ্তর সম্পাদক ছিল আর কোথাও কেউ

নেই। এখন বাদী হতে হলে আমাদের তিনজনের একজনকে হতেই হবে।  পরলাম কিনা নতুন বিপদে!

সাব ইন্সপেক্টর সাহেব কে সভাপতি বললেন ,

" থানায় কোর্টে দৌড়াদৌড়ি করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। " 

 তখন তারা হাসলো। ওকে জিজ্ঞেস করা হলো,

" এই তোর বাসা কোথায়?"

 পাশের গলিতে  দেখালো ওর বাপের চারতলা বাড়ি, পরিচিত লোক।  মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল ওকে নিয়ে সেই

রাত তিনটার সময় ওর বাসার গেটে গিয়ে হাজির হলো সবাই। জোরে নক করে ওর পিতাকে বের করা হলো।  বলা

হলো,

"কি ভাই আপনার ছেলে এসব কি করে বেড়াচ্ছে।" 

সে বলল,

" ওর মা মারা গেছে।  আমার আবার বিয়ে করতে হয়েছে।  সৎ মায়ের  সাথে বনিবনা হয় না।  কি করব ভাই?"

বলা হলো,

" কোন কাজে লাগিয়ে দিন। না হলে বিদেশ পাঠিয়ে দিন।  এভাবে চললে আপনার ইজ্জত থাকবে?

 সে বলল,

" ইজ্জত আর আছে নাকি? "

সাব ইন্সপেক্টর সাহেব বললেন,

" আপনি দায়িত্ব নিয়ে আপনার ছেলেকে ঘরে নিয়ে যান।  আপনার খাতিরে এই ভাইরা আর মামলা করবে না।

আপনি যেভাবে পারেন ওকে দায়িত্ব নিয়ে মানুষ করুন।  নতুন করে আবার ওর জীবনকে ভালো করার ব্যবস্থা

করুন। "

যাহোক ওর পিতা দায়িত্ব নিল।  সমিতি  হাফ ছেড়ে বাঁচলো। সাব ইন্সপেক্টর মুচকি হাসলো।

ক্ষনিকের জন্য সময় দেওয়া যায় দীর্ঘদিনের জন্য সময় দেওয়া সম্ভবপর নয়। আর এই সুযোগটাই অপরাধীরা

গ্রহণ করে, কেউ বাদী হতে চায় না। পিটাপিটি করতে ভালো লাগে।  কোর্টে থানায় দৌড়াদৌড়ি করতে কেউ চায়না। 

 যা হোক সাংস্কৃতিক সম্পাদক সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হলো,

" আপনার গতবারের মতো কোনো সমস্যা হয়েছিল কি?"

 সে বলল,

" হ্যাঁ আমাকে সাক্ষী হতে বলেছিল। "

 আমি তাদেরকে সা ফ জানিয়ে দিয়েছি,

" 'দয়াও চাই, মাফও চাই, আমাকে এসবের মধ্যে জড়াবেন না।  উপকার যা করেছি তা এখানেই শেষ।  দৌড়াদৌড়ি

করার ভাই সময় নেই।'

তারা আমার কথা মেনেছে এবং আমাকে রেহাই দিয়েছে। "


১২.

যারা সামাজিক কাজে নিজেদেরকে নিয়োজিত করে তারা সর্বপ্রকার সমস্যা প্রতিকূলতা পাড়ি দেওয়ার সহনশীলতা

রাখে বলেই সুনাম অর্জন করে। যাদের এই সহনশীলতা নেই তাদের পক্ষে সমাজ নেতা হওয়ার কোন যোগ্যতাই

নেই। অথচ বর্তমান সময়ে তারাই নেতা হওয়ার জন্য দৌড় ঝাপ দেয় যাদের যোগ্যতা নেই, হলে পরে কোন

কাজেই তাদের দেখা যায় না। এজন্যই সমাজ কার্যক্রম স্থবির।   কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। নিজেদের নিয়েই

চিন্তা করে সবাই। অন্যের জন্য চিন্তার কোনো সময় নেই। পূর্বে গ্রামে এক স্থানে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেই হতো

ভাই অমুকের বাড়িটা কোথায় ১০ মাইল দূরে তারপরেও খোঁজ পাওয়া যেত। এখন পাওয়া যায় না। গ্রামেই পাওয়া

যায়না আর শহরে তো দূরের কথা। আমেরিকা ফেরত এক ধনবান ব্যক্তির ধানমন্ডির বাড়িতে তার পিতার মৃত্যুর

চারদিনের মিলাদ মাহফিলে গিয়েছিলাম।  পিতার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে এসেছে।  অন্যান  ভাই বোন আত্মীয় স্বজনরা

আসেনি, সময় কোথায় ? প্রচুর পয়সাওয়ালা কিন্তু মিলাদের মিষ্টি খাওয়ানোর লোক নেই। 

ধীরে ধীরে আমরা কি সেই সমাজের দিকে চলে যাচ্ছি!




Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url